শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভুটানের রাজা জিগমে খেসার সম্পর্কে যা জানা যায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক   |   মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   28 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ভুটানের রাজা জিগমে খেসার সম্পর্কে যা জানা যায়

একটা গল্প প্রচলিত রয়েছে- এক তরুণ যুবরাজ ফুটবলের পাগল। খেলতেন গোলকিপার হিসেবে। তবে কখনও গোল খেতেন না। পরে তিনি চিন্তা করে দেখলেন কেন তিনি গোল খান না, শুধু প্রতিপক্ষ গোল খায়! এর উত্তরে তিনি পেলেন, যেহেতু তিনি যুবরাজ তাই তাকে সম্মান দেখিয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা অন্যদিকে পাঠিয়ে দেন। এরপর সেদিন থেকেই তার প্রিয় ফুটবল খেলা ছেড়ে দেন সেই যুবরাজ।

গল্পটি ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের। তরুণ বয়সে তিনি দেশটির প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ খেলতেন। এছাড়া বাস্কেটবল এবং ফটোগ্রাফি নিয়েও বেশ আগ্রহ রয়েছে তার। সাদামাটা জীবন-যাপনের এমন অনেক গল্প আছে ভুটানের রাজাকে নিয়ে। গণতন্ত্রের জোয়ারের মধ্যেও জনদরদী রাজা হিসেবে বিশ্বে সুনাম রয়েছে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের। সবথেকে বেশি প্রচলিত রয়েছে ড্রাগন দেশের রাজার প্রেমের গল্প। ড্রাগনের দেশ তথা স্থানীয় ভাষায় ‘ড্রুক ইয়ুল’ নামের ছোট্ট দেশ ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিল ওয়াংচুক বিয়ে করেন সাধারণ ঘরের সুন্দরী তরুণী জেটসুন পেমাকে।

রাজা জিগমে আর জেটসুনের মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল সেই ১৪ বছর আগে থিম্পুর এক ঘরোয়া বনভোজনে গিয়ে। তখন জেটসুনের বয়স ছিল সাত আর জিগমে ছিলেন ১৭ বছরের। গত আগস্ট মাসে ছাত্র-ছাত্রীদের এক সমাবেশে নিজেদের সেই ছোট্ট বয়সের প্রেমের গল্প শুনিয়েছেন রাজা জিগমে নিজেই। তিনি বলেন, ‘আমি তখন রাজপুত্র। সেদিন আমি জেটসুনের সামনে হাটু গেঁড়ে বসে বলেছিলাম, তুমি যখন বড় হবে, তখন যদি আমি এবং তুমি দু’জনই অবিবাহিত থাকি এবং যদি দু’জনই চাই তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো।’

প্রেমের সফল পরিণতি ঘটে ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর, একটি চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে। তবে সাত লাখ অধিবাসীর ছোট্ট দেশটির প্রিয় রাজা জিগমে দেশের ভবিষ্যৎ রানির কথা জনগণকে জানান গত মে মাসে। সেই থেকে দেশের মধ্যে রাজার প্রায় প্রতিটি সফরেই সঙ্গী হয়েছেন জেটসুন। এমনকি এই সফরের সময়গুলোতে রাজা জিগমে এমনভাবে জেটসুনের হাত ধরে ঘুরতেন যে, তা ভুটানের তরুণ-তরুণীদের কাছে এখন বেশ অনুসরণীয় ধারায় পরিণত হয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম দুই বড় শক্তিধর দেশ চীন এবং ভারতের মাঝে নিরিবিলি ছিমছাম এই ড্রাগনের দেশ ভুটান। অক্সফোর্ড পড়ুয়া রাজা জিগমে ২০০৬ সালে রাজ সিংহাসনে বসার পর থেকে দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে মানুষের সাথে দেখা করেছেন। এমনকি অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় পায়ে হেঁটেও গিয়েছেন জিগমে। কথা বলেছেন, খোঁজ-খবর নিয়েছেন আপামর জনসাধারণের। শুধু তাই নয়, সপ্তদশ শতকে তৈরি থিম্পুর ছোট্ট রাজ কুটিরে এখনও জনসাধারণকে আমন্ত্রণ জানান। চা খাওয়ান এবং খোলা মনে গল্প করেন জিগমে। যে কারণে তিনি মহানুভব রাজা হিসেবে বেশি জনপ্রিয়।

‘সুখী’ ভুটানের রাজা ও রাজ্য শাসন

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরই আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভুটান। দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আধুনিক ভুটান শাসন করে প্রায় ১১৫ বছরের পুরোনো ওয়াংচুক রাজপরিবার। ১৭ হাজার ৩০০ বর্গমাইলের দেশটির জনসংখ্যা প্রায় সাত লাখ। রাজধানী থিম্পু। মাথাপিছু আয় ২০০০ মার্কিন ডলারের বেশি।

২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক রাজ্যভার গ্রহণ করেন। ২৮ বছর বয়সে দায়িত্ব গ্রহণ করায় তিনি ইতিহাসের অন্যতম কনিষ্ঠ রাজা হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত থেকে পড়াশুনা করে আসা রাজা তরুণ বয়সে সিংহাসনে আসীন হলেও এর জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

১৬ বছর রাজ্য চালানোর পর ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগের আগে তার পিতা জিগমে সিংয়ে ওয়াংচুক ছেলেকে তৈরি করার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করেছিলেন।

তার নেতৃত্বে ভুটানের প্রজারা ভালো আছেন, এমনটাই ধারণা দেশটির বাসিন্দাদের। নিজের বিয়ের মধ্য দিয়েও বর্তমান রাজা তেমন বার্তাই দিয়েছেন।

মোট জাতীয় উৎপাদনের বিকল্প হিসাবে রাজা গিজমে খেসার ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ ধারণাটি সামনে নিয়ে আসেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, একটি জাতির সমৃদ্ধির নির্ভরযোগ্য লক্ষণ হল- তার নাগরিকদের সুখী করার ক্ষমতা।

এছাড়া জিগমে খেসার, তার সুদর্শন চেহারার জন্য পরিচিত। তাকে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ‘প্রিন্স চার্মিং’ বলে থাকেন।

বাংলাদেশ ও ভুটানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে শুরু থেকেই সমর্থন দিয়েছিল ভুটান। আর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার তালিকাতেও দেশটির নাম সবার প্রথমে। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর যে দুটি দেশ প্রথম বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল তার একটি ছিল ভুটান, অন্যটি ভারত।

দুটি দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বের সম্পর্কের ভিত্তিকে জোরদার করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিন দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভুটানের তৎকালীন রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক। যিনি বর্তমান রাজার বাবা।

ওই সফরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভুটানের রাজার বৈঠকে একমত পোষণ করা হয় যে, সব সম্পর্কের নীতি হবে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক সংহতি, পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক সুবিধা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।

পরবর্তীকালে দুদেশের সম্পর্ক এসব নীতির ওপর ভিত্তি করেই আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আর ভুটানের রাজা ২০১১ সালের মার্চে এবং ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফর করেন। সার্কের চেয়ারপারসন হিসাবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ২০১২ সালে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুককে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হয়।

ভুটানের রানিমাতা ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভুটান সফরে যান।

ভুটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২০১৯ সালের এপ্রিলে এক দ্বিপাক্ষিক সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই সময় দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক বেশ কয়েকটি দলিলও স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

Facebook Comments Box

Posted ১০:০০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com